ইস্টবেঙ্গল
মদ্রিচের সঙ্গে সাক্ষাৎই অনুপ্রেরণা জ্যোতির
রে স্পোর্টজ ওয়েব ডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের ছোট্ট গ্রাম সরদারপুর থেকে শুরু। সেখানে একমাত্র মেয়ে হিসেবে ফুটবল খেলতে নামা জ্যোতি চৌহান আজ দেশের নারী ফুটবলের উজ্জ্বল মুখ। ইউরোপে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়েছেন, আর এখন তাঁর লক্ষ্য ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে নতুন অধ্যায় লেখা। কিংবদন্তি লুকা মদ্রিচের সঙ্গে দেখা হওয়া তাঁকে যেমন অনুপ্রেরণা দিয়েছে, তেমনি তাঁর গল্প প্রেরণা হয়ে উঠছে ভারতের হাজার তরুণীর কাছে।
Ray Sportz: ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করছেন, কেমন লাগছে?
জ্যোতি: খুব খুশি লাগছে। ইস্টবেঙ্গলে খেলা আমার জন্য গর্বের বিষয়। আমি অপেক্ষা করছি মাঠে নেমে দলের জন্য সেরাটা দিতে।
Ray Sportz: ইউরোপে আপনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছেন। সেখানে আর ভারতের ফুটবলে কী পার্থক্য দেখেছেন?
জ্যোতি: ইউরোপে আবহাওয়া, মাঠের মান আর খেলোয়াড়দের ফিটনেসের দিকটা অনেক আলাদা। শুরুতে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল সবাই যেন বুঝতে পারে— ভারতে ভালো ফুটবলার আছে।
Ray Sportz: নতুন দলে মানিয়ে নিতে কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
জ্যোতি: শুরুতে একটু অনিশ্চয়তা ছিল, কিন্তু ম্যাচ খেলতে খেলতে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এখন দলের সঙ্গে সুন্দরভাবে মানিয়ে নিয়েছি।
Ray Sportz: ইস্টবেঙ্গলকেই কেন বেছে নিলেন?
জ্যোতি: কলকাতায় ফুটবল মানেই আবেগ। ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকদের ভালোবাসা আমাকে টেনেছে। এমন ফ্যানবেস একজন খেলোয়াড়কে আরও ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করে।
Ray Sportz: আপনার ফুটবল যাত্রা শুরুটা কেমন ছিল?
জ্যোতি: আমি ইন্দোর জেলার ছোট্ট গ্রাম সরদারপুরের মেয়ে। ক্লাস ফোরে ফুটবল শুরু করি। তখন আশেপাশে কোনো মেয়ে খেলত না, আমি একাই মাঠে নামতাম। বাবার মৃত্যু হয় ২০১২ সালে, তখন থেকেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয়। সমাজের বাধা, পরিবারের চাপ— সব পেরিয়ে এই জায়গায় এসেছি।
Ray Sportz: যাঁরা একসময় বিরোধিতা করেছিলেন, এখন তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন?
জ্যোতি: এখন তাঁরা গর্ব করেন। আগে যারা বলত, “মেয়েরা ফুটবল খেলে না,” এখন নিজেরাই বলে— “ও আমাদের গ্রামের জ্যোতি।” এটাই আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
Ray Sportz: আপনার বাবা-মায়ের ট্যাটু করেছেন— এর পেছনের গল্পটা কী?
জ্যোতি: বাবার একটিই ছবি ছিল। তিনি যেন সবসময় আমার সঙ্গে থাকেন, সেই জন্যই তাঁর মুখ স্থায়ীভাবে শরীরে এঁকেছি। এটা আমার আবেগ, আমার শক্তি।
Ray Sportz: লুকা মদ্রিচের সঙ্গে দেখা— সেটা কেমন অভিজ্ঞতা?
জ্যোতি: অসাধারণ! আমি খুব ভাগ্যবান যে তাঁর সঙ্গে একই মাঠে অনুশীলন করতে পেরেছি। তিনি আমার সঙ্গে ৫–১০ মিনিট কথা বলেছিলেন— ভারতের ফুটবল নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন। এত বড় একজন কিংবদন্তি এত আন্তরিকভাবে কথা বললেন, সেটাই আমার অনুপ্রেরণার উৎস।
Ray Sportz: ইউরোপে খেলার অভিজ্ঞতা এখন কতটা সাহায্য করছে?
জ্যোতি: আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। এখন কোচ অ্যান্থনি কোচের অধীনে কাজ করছি— উনি জানেন আমি কোথায় উন্নতি করতে চাই, সেভাবেই গাইড করেন। আমাদের লক্ষ্য AFC-তে যোগ্যতা অর্জন করা।
Ray Sportz: ইস্টবেঙ্গলের নারী দলের ওপর প্রত্যাশা অনেক। এটা চাপ না অনুপ্রেরণা?
জ্যোতি: দুই-ই আছে। ভক্তদের ভালোবাসা আমাদের এগিয়ে দেয়, কিন্তু তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে কষ্ট লাগে। আমরা চেষ্টা করি মাঠে প্রতিটা মুহূর্তে নিজেদের সেরাটা দিতে।
Ray Sportz: ভারতের নারী ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ জিতেছে। এটা কি আপনাদেরও অনুপ্রাণিত করে?
জ্যোতি: অবশ্যই। ওদের সাফল্য প্রমাণ করে— মেয়েরা পারলে, ফুটবলও পারবে। আমার স্বপ্ন, একদিন ভারতের নারী ফুটবল দলও বিশ্বকাপে খেলবে এবং দেশকে গর্বিত করবে।
