ক্রিকেট
টি-টোয়েন্টি দলে গিলকে নিয়ে ধোঁয়াশা, বিস্তারিত জানতে পড়ুন
রে স্পোর্টজ ওয়েব ডেস্ক: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দীর্ঘ বিরতির পর এশিয়া কাপের দলে ফিরেছিলেন শুভমন গিল। কিন্তু শুধু দলে ফেরাই নয় অপেক্ষা করছিল বড় চমক। রাতারাতি দলের সহ অধিনায়কের পদে বসেছিলেন তিনি। টেস্ট এবং একদিনের ক্রিকেটের পরে এবার যে ভারতকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিতে চলেছেন গিল এই বিষয়টা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে এসেছিল। কিন্তু মাত্র কিছু মাসের ব্যবধানেই পাল্টে গেল সব হিসেব। এশিয়া কাপের সাতটি ম্যাচ এবং অস্ট্রেলিয়া সিরিজের চারটি ম্যাচের পরে এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শুভমন গিলের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়েছে প্রশ্নের মুখোমুখি।
টেস্ট ক্রিকেটে গিলকে অধিনায়ক হিসেবে মেনে নিলেও একদিনের ক্রিকেটে রোহিত শর্মার পরিবর্তে গিলের হাতে অধিনায়কের ব্যাটন তুলে দেওয়া নিয়ে শুরু হয়েছিল তুমুল বিতর্ক। যদিও সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া বিশেষ উপায় ছিল না। তবে কয়েক মাসের মধ্যেই পাল্টে যায় সব পরিসংখ্যান। একদিকে যখন টেস্ট ক্রিকেট এবং একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ ভালোই পরিসংখ্যান গিলের, অন্যদিকে তখনই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কিন্তু উল্টো কথা বলছে। তার ব্যাগ থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শেষ অর্ধশত রান এসেছিল ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। এরপর ওপেনার হিসেবে মোট ১৪ টি ইনিংস খেলেও একটি অর্ধশতরান করতে পারেননি গিল। তার অনুপস্থিতিতে অভিষেক শর্মার সাথে সঞ্জু স্যামসাংয়ের জুটি রীতিমতো ধারালো হয়ে উঠছিল। কিন্তু গিলের দলে ফেরার কারণে সঞ্জুকে নামতে হয়েছে অনেক পরে। যার ফলে একাধিক ম্যাচেই ব্যাট করার সুযোগ পাননি। তবে পরিসংখ্যানের দিকে চোখ বোলালে বোঝা যাবে দলে গিলের পরিপূরক পাওয়া মোটেই সমস্যা নয়। ওপেনার হিসেবে নিজের জায়গা যথেষ্ট মজবুত করে নিয়েছেন অভিষেক শর্মা। ২৩টি ম্যাচে তিনি ৯১২ রান করেছেন, ১৯৬.৫৫ স্ট্রাইক রেট। সঞ্জু ১৩টি ইনিংসে ১৮২.৮৯ স্ট্রাইক রেটে ৪১৭ রান করেছেন। তিনটি শতরানও রয়েছে তার ঝুলিতে। ২২টি ইনিংসে ১৬৪.৩১ স্ট্রাইক রেটে ৭২৩ রান করেছেন যশস্বী। তাঁর একটি শতরান এবং পাঁচটি অর্ধশতরান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ৯টি ইনিংসে ১৪৭.১৭ স্ট্রাইক রেটে ৩৬৫ রান করেছেন। এদের প্রত্যেকের থেকেই স্ট্রাইক রেট অনেক কম গিলের। ৩০টি ইনিংসে ১৪১.২০ স্ট্রাইক রেটে ৭৪৭ রান করেছেন। একটি শতরান এবং তিনটি অর্ধশতরান রয়েছে তার দখলে। কিন্তু এই ওপেনারদের মধ্যে সবথেকে বেশি সংখ্যক ম্যাচ শেষ দু তিন বছরে খেলার সুযোগ পেয়েছেন গিল। অন্যদিকে অনেক চেষ্টা করেও সেরকম রান পাচ্ছেন না তিনি। বৃহস্পতিবার গোল্ডকোস্টে ৩৯ বলে করেছেন মাত্র ৪৬ রান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এত ধীর গতির ব্যাটিং কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর তাই রবি শাস্ত্রী থেকে শুরু করে ইরফান পাঠান পর্যন্ত প্রত্যেকেই সমালোচনাও করেছেন তার ব্যাটিংয়ের। একদিকে যেখানে রবি শাস্ত্রীর মনে হয়েছে এই ফরম্যাটটাই গিলের জন্য উপযুক্ত নয়, অন্যদিকে তখনই পাঠান গিলের মধ্যে দেখেছেন আড়ষ্টতা এবং ভয়। গৌতম গম্ভীর এর অধীনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম থেকেই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে খেলেছে ভারত। তার পথেই হেঁটেছে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবও। কিন্তু গিলের দলে আসার পর থেকেই রান তুলতে বেশ কিছুটা হোঁচট খেতে হয়েছে ভারতকে। বেশ কয়েকটি বল খেলার পর উইকেটে থিতু হয়ে তবেই বোলারদের উপর আধিপত্য দেখাতে পারেন গিল। তবে এই কায়দা টেস্ট ক্রিকেট বা একদিনের ক্রিকেটে চললেও টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে যথেষ্টই ভোগাচ্ছে দলকে। আর সেখানেই বারবার উঠে আসছে সঞ্জুর নাম। দুরন্ত পারফরমেন্সের পরেও কেন তাকে দল থেকে বাদ পড়তে হলেও এই নিয়েও মুখ খুলছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে বলাই বাহুল্য দীর্ঘদিন বাদে দলে ফেরানোর পরেই সহ অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন যে গিল, তাকে এই মুহূর্তে দল থেকে সরিয়ে দেওয়ার কোন প্রশ্নই উঠছে না। স্ট্রাইক রেট কম হওয়ার কারণে হয়তো সমালোচনার মুখোমুখি হবেন তিনি, কিন্তু এখনই যদি তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয় তাহলে বড় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন নির্বাচক কমিটি এবং কোচ। অন্যদিকে শুধুমাত্র ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবেই নয় গিলকেই নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটের মুখ হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। এখন দেখার কত তাড়াতাড়ি পুরনো ছন্দে ফিরতে পারেন তিনি।
