রে স্পোর্টজ ওয়েব ডেস্ক: আইএফএ শিল্ডের ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে খুব একটা বেশি উন্মাদনা ছিল বাগান সমর্থকদের মধ্যে। ম্যাচ শুরুর আগেই সেই চেনা বাগান জনতাদের স্টেডিয়ামের বাইরে দেখা যায়নি। তবে ফুটবলাররা যেমনভাবে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছেন তারই ফল পেল এদিন সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। শিল্ডের ফাইনালে শক্তিশালী ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল মোহনবাগান। সেই ম্যাচের প্রথমার্ধেই এক গোলে পিছিয়ে পড়লেও, প্রথমার্ধের শেষেই দলকে সমতায় ফিরেছিলেন আপুইয়া। অবশেষে নির্ধারিত এবং অতিরিক্ত সময়ে খেলা গড়ালেও ফলাফল অমীমাংসিতই থাকে। যার ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই ইস্টবেঙ্গলকে ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়ে, ২১তম বারের জন্য আইএফএ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণাত্মক মানসিকতা পরিষ্কার করেন লাল-হলুদের ফুটবলাররা। শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণ বাগান রক্ষণের তুলে আনতে থাকেন হামিদ, বিপিন সিংরা। এদিকে ম্যাচের ৭ মিনিটের মাথায় একটি গোলমুখী শট নেন মোহনবাগানের জেমি ম্যাকলারেন। তবে সেই শট রুখে দেন ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক প্রভসুখান গিল। ম্যাচের ১৯ মিনিটে একটি গোলমুখী শট নেন ইস্টবেঙ্গলের নওরেম মহেশ সিংও। তবে সেই বলেও সেরকম জোর না থাকায় সহজেই বল তালুবন্দি করেন বিশাল কাইথ। অন্যদিকে ম্যাচের ৩১তম মিনিটে পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। সেখান থেকে পেনাল্টি মিস করেন জেসন কামিন্স। ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই, ম্যাচের ৩৬ মিনিটে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন হামিদ আহাদাদ। প্রথমার্ধের শেষের দিকে পরপর দুটি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন সেই হামিদ আহাদাদ। নাহলে ব্যবধান বারতো। কিন্তু প্রথমার্ধের সংযোজিত সময়ের একেবারে শেষে গোল করে মোহনবাগানকে ম্যাচে ফেরান আপুইয়া। যার প্রথমার্ধে ফলাফল থাকে ১-১।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কর্নার পায় মোহনবাগান। যদিও কাজের কাজ হয়নি। এদিকে ৫২ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন এডমুন্ড লালরিনডিকা। তার জায়গায় অস্কার মাঠে আনেন পিভি বিষ্ণুকে। ৫৯ মিনিটে দলে পরিবর্তন আনেন হোসে মোলিনাও। জেসন কামিন্সকে তুলে তিনি মাঠে আনেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রবসন রবিনহোকে। এদিকে ৬২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় মোহনবাগান। তবে সেখান থেকে গোল তুলে নিতে ব্যার্থ হন বাগান ফুটবলাররা। এদিকে একসঙ্গে তিনজন ফুটবলার পরিবর্তন করে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো। হামিদ, নুঙ্গা এবং সউল ক্রেসপোকে তুলে নিয়ে তিনি মাঠে আনেন মিগুয়েল ফারেরা, জয় গুপ্তা এবং নবাগত জাপানি ফরোয়ার্ড হিরোশি ইবুসুকিকে। মাঠে এসেই প্রথম হেডেই প্রায় গোলমুখ খুলে ফেলেছিলেন হিরোশি। ৭৬ মিনিটে একক দক্ষতায় বল নিয়ে বাগান রক্ষণের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন মহম্মদ রশিদ। একটি জোড়ালো শটও নিয়েছিলেন। তবে অল্পের জন্য বারপোস্ট ঘেষে সেই শট চলে যায় বাইরে। ৮০ মিনিটে হিরোশির গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। ৮৬ মিনিটে কর্নার পায় ইস্টবেঙ্গল। তবে কাজের কাজ হয়নি। প্রথমার্ধের শেষেও আক্রমণে উঠেছিল ইস্টবেঙ্গল। অন্যদিকে খেলার একদম শেষ মুহূর্তে রবসনের ভাসানো বল থেকে প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন বাগান ডিফেন্ডার মেহতাব সিং। তবে সেই শট দারুনভাবে রুখে দেন ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক গিল। যার ফলে দ্বিতীয়ার্ধ শেষ হয় ১-১ ফলাফলে। যার ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
শুরুতেই দলে পরিবর্তন করেন বাগান কোচ হোসে মোলিনা। সাহাল আব্দুল সামাদকে তুলে তিনি মাঠে আনেন মনভির সিংকে। পরিবর্তন আনেন অস্কারও। বিপিন সিংকে তুলে নিয়ে মাঝমাঠে তিনি নিয়ে আসেন সৌভিক চক্রবর্তীকে। দুই দলই গোলের সুযোগ তৈরি করলেও, গোল আসেনি। ফলে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধও শেষ হয় অমীমাংসিত হিসেবে। দ্বিতীয়ার্ধে জেমি ম্যাকলারেনের জায়গায় মাঠে আসেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই একটি দুরন্ত শট নিয়েছিলেন হিরোশি। তবে সেই শট টার্গেটে রাখতে পারেননি তিনি। এছাড়াও দুই দলই অনেক সুযোগ তৈরি করেছিল গোলের, তবুও গোল করতে ব্যার্থ হয়েছে দুই দলই। ফলে অবশেষে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে ইস্টবেঙ্গলকে ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়ে, ২১তম বারের জন্য আইএফএ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হল মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে টাইব্রেকারে গোল করেছেন মিগুয়েল ফারেরা, কেভিন সিবিল্লে এবং নাওরেম মহেশ সিং। অন্যদিকে মোহনবাগানের হয়ে গোল করেছেন রবসন রবিনহো, মনভির সিং, লিস্টন কোলাসো, দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং মেহতাব সিং। জয় গুপ্তার শট দারুন সেভ করেছেন বাগান গোলরক্ষক বিশাল কাইথ।